পাহাড়ের সুন্দরবন

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ১:৩৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ফারজানা ওয়াহিদ

pablakhali3

এমন অরণ্য তাকে উদ্দাম মর্মর মূর্তি ধরে নেয়া যায়। বাতাসের অতি দম্ভ বৃক্ষের সমান উঁচু মেঘ, আরো উঁচু অরণ্যের সীমা। এটা শুধু অরণ্যেই শোভা পায়। এতো উঁচু এমন বিশাল। তাই তো মর্মরমূর্তি অরণ্যকে নিঃশব্দ প্রস্তর বললে ভুল হয়। মনে হয় এ নৈঃশব্দ্য প্রস্তরেরই প্রাণ।

সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত বনাঞ্চল পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পাবলাখালি বন্যপ্রাণী ও অভয়ারণ্যের আয়তন ৪২ হাজার ৮৭ হেক্টর। মানুষের কলাহল এড়িয়ে যারা একটু নীরবে আর নিভৃতে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তাদের জন্যই চমৎকার একটি স্থান হতে পারে পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝে সবুজের সমারোহ আর ফাঁকে ফাঁকে বয়ে চলে সবুজ পানির যুগলবন্দীতে এক অনন্য অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে এখানে আসতে হবে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

pablakhali

পাবলাখালি পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে রাঙামাটি শহর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের একেবারে উত্তর প্রান্তে কাসালং নদীর পাশে অবস্থিত। নদীর দুই পাড় জুড়ে সবুজ আর সারি সারি মানুষের বসতি, পানকৌড়ি আর অচেনা পাখির ঝাঁকে ঠাসা পুরোটা পথ। বর্ষাকাল এ পথের পাহাড়গুলোর গায়ে ছোট বড় অনেক পাহাড়ি ঝর্না দেখা যায়। এ পথে শুভলং, বর্ণছড়ি, লঙ্গদু, মাইনী হয়ে পৌঁছাতে হবে পাবলাখালি।

এই বন যেন পাহাড়ের সুন্দরবন। বনে হাতির পাল, কয়েক প্রজাতির বানর, উল্লুক, বন্য শুকর, সাম্বার হরিণ, বনরুই প্রভৃতির বসবাস এই জঙ্গলে। আর প্রচুর পরিমাণে পাখির সমারোহ ৪২ হাজার ৮৭ হেক্টর আয়তনের এই বনজুড়ে। আছে সারি সারি আদি গর্জন, জারুল, চম্বল, সেগুন, কাঞ্চন, চাপালিশের মতো নানান প্রজাতির গাছ।

এতো দীর্ঘকায় প্রাচীন বৃক্ষ পাহাড় অন্য কোথাও চোখে পরে না। এখানে বন বিভাগ তৈরি করেছে গেস্ট হাউজ। তার পাশে এক অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য- বড় বড় বানরের ঝাঁক, মানুষের এতো কাছাকাছি এমন সহজ বিচরণ বেশ আনন্দ দেয়।

pablakhali1

পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ভ্রমণে গেলে প্রথমে যেতে হবে রাঙামাটি সদরে। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ডলফিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদি। রাঙামাটি শহর থেকে পাবলাখালির দূরত্ব একশ কিলোমিটারেরও বেশি। এখানে আসার জন্য দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রাঙামাটি এসে সেখান থেকে মারিস্যাগামী লঞ্চে চড়ে নামতে হবে মাইনীমুখ। তারপর এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। ভাড়া জনপ্রতি ১৭০ থেকে ২০০ টাকার মতো। তবে শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটি-বাঘাইছড়ি নৌপথ বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে সরাসরি বাঘাইছড়ি হয়ে যেতে হবে। ইঞ্জিনবোটই তখন ভরসা।

পাবলাখালি ভ্রমণে গেলে থাকতে পারবেন মাইনীমুখ বাজারে। জায়গাটিতে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। কক্ষ ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা। এছাড়া বন বিভাগের একটি বাংলো আছে সেখানে। মাইনীমুখ থেকে জল পথে প্রায় ২০ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত লংগদু উপজেলা সদরের জেলা পরিষদ বিশ্রামগারেও থাকতে পারেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G